মহাস্থান নিউজ:
ঐতিহাসিক করতোয়া নদীকে বলাৎকার করা হয়েছে। মাকে বলাৎকার করা আর নদীকে বলাৎকার করা একই জিনিস। এই নদীকে রক্ষায় অন্যান্য কর্মসূচির সাথে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে নদী রক্ষার মেসেজ দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার রোচাস রেস্টেুরেন্টে এসব কথা বলেছেন বগুড়ার অন্যতম কথা সাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার। বগুড়ায় দখল-দূষণে বিপন্ন করতোয়ায়সহ অন্যান্য নদী জনমানুষের জীবিকা ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বগুড়ার স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেসকিউ আওয়ার পিপল (রোপ) ও স্বপ্ন। এতে সভাপতিত্ব করেন রোপের সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা পারভীন শ্যামলী। সঞ্চালনা করেন এএলআরডির প্রোগ্রাম অফিসার মির্জা আজিম হায়দার।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নদী পাড়ের মানুষ, গণমাধ্যম কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। করতোয়া নদী দখল-দূষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেন তারা।
আলোচনায় দখলদারীদের ছবি সাতমাথায় ঝুলিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন মৎস্য চাষী নিত্যানন্দ দাস। তিনি বলেন, নদী দখলকারীরা আসামীদের সমান। তাই আসামীদের তালিকার মতো তাদেরও তালিকা সাতমাথায় টাঙিয়ে দেয়া হোক।
নদীকে যারা হত্যা করেছে, তারা মানুষ হতে পারে না এমনটা মনে করেন আদর্শ কলেজের শিক্ষক জাকির ইসলাম সবুজ। তিনি জানান, জলাধার, নদী তলদেশ ভরাট হচ্ছে। বগুড়ার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক অবস্থায়, সংবাদকর্মীদের এসব নিয়ে আরও বেশি বেশি লেখালেখি করা উচিত।
নদীপাড়ের মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন পরিবেশ ও নাগরিক উন্নয়ন কমিটির পরিচালক আব্দুল খালেক। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসন কার্যালয় ঘেরাও করার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
এমন প্রস্তাবের পাশাপাশি আব্দুল খালেক আরও বলেন, নদী রক্ষায় গণশুনানি করতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে হবে। তাদের জাগ্রত করতে হবে। কারণ পরিবর্তন আনতে তরুণরা সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে।
বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তী জানান, নিজের বাড়ি থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে করতোয়া নদীর দখল দূষণে আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও জানান, করতোয়া নদীর বাতাসও এখন দূষিত। এর পাশে গেলে নাকে রুমাল দিয়ে থাকতে হয়। কলকারখানার বর্জ্য সব যাচ্ছে এই নদীতে। এ জন্য তরুণ চক্রবর্তী মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধেই আগে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলের ব্যুরো প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু জানান, করতোয়া দখলদারদের তালিকা ঝুলিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাটি ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। তবে এর পাশাপাশি সাতদিন ধরে দখলদারদের নাম মাইকিং করে প্রচার করা যেতে পারে। একই সঙ্গে দখলদারদের কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হবে।
এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বেলার প্রোগ্রাম এন্ড ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর এএমএম মামুন, বেলার আইনজীবী আসাদুল হক গালীব, স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিখা, পুরোহিত সুশীল কুমার মৈত্র, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক তন্ময় সান্যাল, সমাজ কল্যাণের নির্বাহী পরিচালক মেহেরুন্নেসা।