যমুনা নিউজ বিডিঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণডিহির রবীন্দ্র কমপ্লেক্স দীর্ঘ ২৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে উন্নয়নকাজ। ফলে বিশ্বকবি ও তার স্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দক্ষিণডিহিতে গতকাল রবিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী ও লোকজ মেলা। এই মেলা চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে খুলনা জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। বিশ্বকবি ও তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ার পর সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৮ আগস্ট বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দক্ষিণডিহিতে পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৯ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় এ বাবদ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ঐ টাকা দিয়ে ২০১২ সালের মাঝামাঝি ভবন সংস্কার, একপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, বিদ্যুতের সংযোগসহ অন্যান্য কাজ শেষ করে।
তবে এর আগে দ্বিতল ভবনের সামনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর আবক্ষমূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া পুরোনো ছফেদাতলায় নির্মিত হয়েছিল মৃণালিনী মঞ্চ। কিন্তু বাড়িটি ঘিরে রবীন্দ্রনাথের কর্মময় জীবনের ওপর সংগ্রহশালা কাম লাইব্রেরি, অডিটোরিয়ামসহ রবীন্দ্র চর্চাকেন্দ্র ও রেস্টহাউজ নির্মাণের দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো উপেক্ষিত রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা, পিকনিক স্পট নির্মাণ, রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে প্রবেশের তিনটি রাস্তা প্রশস্তকরণ। এছাড়া এখানে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে প্রস্তাবিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা ক্যাম্পাস বা স্বতন্ত্র ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা, বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে দক্ষিণডিহি রেলস্টেশন এবং খুলনা-বেনাপোলগামী ট্রেনকে মৃণালিনী এক্সপ্রেস নামকরণের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে বর্তমানে দৃশ্যমান কাজের মধ্যে শুধু সীমানাপ্রাচীর, মূল ভবনের সংস্কার ও রঙের কাজ, নিচতলায় অপূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা, দর্শনার্থীদের অবসর যাপনের জন্য ছাউনি তৈরি ও টয়লেট নির্মিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি ২০১৬ সালের ১০ মে দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তবে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের প্রচলন করা হয়। দেশি দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ তিন বছর পর এবারই কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৫ থেকে ২৭ বৈশাখ (৮-১০ মে) খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলা শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানের মধ্যে গতকাল রবিবার বিকাল ৪টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং সাড়ে ৪টায় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আজ সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আলোচনাসভা এবং আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আলোচনাসভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
অন্যদিকে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের ভিটা রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান, সাড়ে ১০টায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুপুর আড়াইটায় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা, বিকাল ৪টায় আলোচনাসভা এবং সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া আজ সোমবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বিকাল ৪টায় আলোচনাসভা ও সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে নৃত্য প্রতিযোগিতা, বিকাল ৪টায় আলোচনাসভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।