একটি পাকা সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। তিন যুগের বেশি সময় ধরে তাদের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার করিপুর গ্রাম ও সদর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই নদী। কোনো পাকা সেতু না থাকায় এখানে নদীর ওপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো দিয়ে আশপাশের ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। একমাত্র সেতুর অভাবে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে দোদুল্যমান একটি বাঁশের সাঁকো আর নিরাপত্তাহীন খেয়া।
এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছর খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। আবার বর্ষা মৌসুমে তা পানিতে তলিয়ে যায়। আর প্রতিদিন সেই বাঁশের তৈরি সাঁকোর ওপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ রোগীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হন। পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নে কম হলেও ২০ হাজার মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের তৈরি সাঁকোটি।
এটি ব্যতীত এ অঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছাতে হলে ঘুরতে হয় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। অথচ, এ স্থানে একটি সেতু নির্মিত হলে সেখান থেকে উপজেলার দূরত্ব দাঁড়ায় মাত্র ২ কিলোমিটার।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড করিমপুর ও গোপালনগর গ্রামের সঙ্গে সদর ইউনিয়নের যোগাযোগের মাধ্যম হলো খেয়াঘাট হয়ে এই সড়কটি। এই সহজ যোগাযোগের একমাত্র বাধা হচ্ছে ধলাই নদী। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখানে একটি সেতু এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হওয়ার পরেও আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
সড়ই বাড়ি, বাদেউবাহাটা, ছতিয়া, চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, রামপুর, রামপাশা, সাইয়া খালি- গ্রামগুলো ছাড়া পৌরসভার আরও ৭ থেকে ১০টি গ্রামের লোকজন এ সাঁকোটি ব্যবহার করেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এ সময় এলাকাবাসী চরম হতাশা ও দুর্ভোগে পড়েন।
শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। ছাতা হাতে ধরব নাকি বই ধরব নাকি বাঁশের সাঁকো ধরে ধরে এই জায়গাটি পেরিয়ে যাব এটা নিয়েই ভয়ে থাকি।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুমিনা বলেন, সাঁকোটি পারাপার হতে গিয়ে অনেকেরই বই ও খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যায়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও দাবিটি বার বারই উপেক্ষিত।
সত্তরোর্ধ্ব কৃষক আবদুল মনাফ বলেন, গত ৫০ বছরে সাঁকোটি পারাপার হতে গিয়ে কয়েকশ লোক আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, রামপুর এবং করিমপুরের সঙ্গে ধলাই নদীর ওপরে একটি সেতু খুবই জরুরি। এখানে বর্তমানে মানুষ বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে পারাপার হয়। আমরা এটি অনেক আগেই এলজিডির মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আমরা আশা করি, কৃষিমন্ত্রী ধলাই নদীর ওপরে ৮টি সেতু করেছেন এবং এটিও করবেন। এই সেতুটি অনেক জরুরি।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, করিমপুর ধলাই নদীর ওপরে যাতায়াতের যে ব্যবস্থা সেখানে সাঁকো দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছে এবং স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং সেই সাঁকো দিয়ে গর্ভবতী মা বোনেরাও যাতায়াত করছে। এখানে যদি সেতুটি নির্মাণ হয় তাহলে ১৫-২০ গ্রামের মানুষ উপকার পাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটি প্রকল্প আছে উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন গ্রাম সড়ক দীর্ঘকরণ ও ১০০ মিটার ব্রিজকরণ। আমরা রামপুর ও করিমপুর ধলাই নদীর ওপরে সেতুর জন্য কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।