নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সিঁধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে এক নারী ও তার ১২ বছরের মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে তাকে জেলা শহর মাইজদী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ২টার দিকে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
আজ বিকেলে চরজব্বার থানায় ভুক্তভোগী নারী দুই জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামি অজ্ঞাত।
গ্রেপ্তারকৃত আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৫০) উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত গোলাপের রহমানের ছেলে। তিনি বর্তমান চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর। সে তিন-চার দিন পর পর বাড়িতে আসে। তাকে কাজের জন্য প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়। ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, এ সুযোগে সোমবার রাত পৌনে ২টা থেকে ২টার মধ্যে ঘরে সিঁধ কেটে প্রবেশ করে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে ও তাকে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ অভিযোগ করে বলেন, সিঁধ কেটে একজন ঘরে ঢুকে দরজা খুলে দিলে বাকি দুজনও ঘরে ঢোকে। পরে তারা আমাকে ও আমার মেয়ের হাত-মুখ বেঁধে ফেলে এবং নির্যাতন চালায়। ধর্ষণকারীরা যাওয়ার সময় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমি এদের মধ্যে দুজনকে চিনি। তারা হলেন- মুন্সী মেম্বার ও গরু ব্যাপারি হারুন।
নির্যাতিতার স্বামী জানান, মুন্সী মেম্বার কিছুদিন আগে তার স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং নানাভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করত। কিন্তু তার স্ত্রী ওইসব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মুন্সী মেম্বার ফোন করে উত্ত্যক্ত করত। পরে মোবাইল নম্বর ব্লক করে দিলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসব ঘটনার জের ধরে তারা এ ঘটনা ঘটায়।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন বলেন, মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২ জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় আরও একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গৃহবধূ ও তার মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।