বগুড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের জন্য গত বছরের ১৮ মে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এর প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পরিষদকে।
কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেই আটকে আছে শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের কাজ। অর্থ বরাদ্দের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও নকশা প্রস্তুত কিংবা টেন্ডার পর্যন্ত কল করা হয়নি।
জানা যায়, ১৯৭৮ সালে বগুড়ার কারুশিল্পী প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল করিম দুলালের নকশায় শহরে শহীদ খোকন পার্কের উত্তর-পূর্ব কোণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। মিনারের উপরিভাগে পশ্চিম পাশে ‘ক’ ‘খ’ ও দক্ষিণ পাশে ‘অ’ ‘আ’ অক্ষর খোদায় করা ছিল। এছাড়া মিনারের পেছনে সুন্দর অর্থবহ ভাস্কর্য স্থাপন করা ছিল। পরবর্তীতে শহীদ মিনারটি ঘিরে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে থাকে।
তবে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৫ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ মিনারটি ভেঙে ফেলে। সেখানে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ব এ ন প ঢ’ অক্ষর সজ্জিত অদ্ভূত আকৃতির একটি মিনার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া সেসময় পার্কে সভা-সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হলে রাজনীতিবিদ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর থেকেই শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণের দাবি তোলেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।
দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এরপরও শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণের কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। তাই আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না বগুড়াবাসী। এতে বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেন, নতুন শহীদ মিনারে আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে না। এটি খুবই হতাশার ও কষ্টের। তবুও বরাদ্দ যা আছে তা দিয়ে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ কাজটি শুরু করা হোক। পুরো শহীদ মিনার চত্বর ঘিরে একটি সাংস্কৃতিকবান্ধব পরিবেশের সৃষ্টি করা হোক। চেতনার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হোক।
বগুড়া জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোহায়েদুল ইসলাম জানান, দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনারের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়নি। শহীদ মিনারটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে হলেও এখনো নকশা পাওয়া যায়নি। প্রাক্কলন করে নকশা পাওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবো।।