রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার) ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। কখনো মাঠে কৃষকের কাছে, কখনো কারও বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। শিশুদের কোলে তুলে নিচ্ছেন। তবে এসবের মধ্যে মাহিকে ভোটারদের নানা আবদার ও প্রশ্নের জবাবও দিতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নে প্রচারণা চালানোর সময় এক নারী ভোটারের কাছে মাহি ভোট চাইতে গেলে ওই ভোটার মাহিকে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘ভোটের পর নেতারা দেশছাড়া হয়ে যায়, এটা আমরা কিন্তু দেখব না। ভোটার আগে যেভাবে মানুষের কাছে যাচ্ছেন, ভোটের পরেও যেন এমনই দেখি।’ভোটারের প্রশ্নের জবাবে মাহি বলেন, ‘আমি তো আর সিনেমা করব না। আমার বাচ্চা হয়ে গেছে। আমার সংসার আছে। আমি আপনাদের নিয়েই থাকব।’
এর আগে ২০ ডিসেম্বর রাজশাহী সার্কিট হাউসে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে মাহিকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে অভিনয় করবেন কি না।
সেখানে অবশ্য তখন মাহি বলেছিলেন, ‘অভিনয়টা আমার রুটি। আমাকে ইন্ডাস্ট্রি পরিচিতি দিয়েছে। তারা ছাড়া আমার আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু অভিনয় তো অভিনয়ের জায়গায় থাকবে। আমি মানুষের সেবা করব। রাজনীতির মূলনীতি মানুষের সেবা করা। সেই সেবাটা করব। আমার আয়টা হবে অভিনয় থেকে। আমার তো কাজ করতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহি গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায় প্রচারণা চালান। সেখানে বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। গত মঙ্গলবারের প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে অভিনয় ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিনয় ছাড়ার ব্যাপারে আমি বলতে চেয়েছিলাম এক রকম, বলে ফেলেছি ও রকম। কারণ, আপনারা সবাই জানেন যে আমার একটা ছোট বেবি হয়েছে। আমার একটা সংসার আছে। কিন্তু আমি আগের মতো যেভাবে সিনেমা করতাম, তো এখন সেটা করতে পারব না। দেখা গেল বছরে এক-দুইটা সিনেমা করব। আর বাকি বছরটাই আমি আমার এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। আমি আসলে জনসাধারণের সেবা করতে চাই।’
তিনি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যেটা দিয়ে আমার পরিচয়, রুটি-রোজগার সেটাই যদি ছেড়ে দিই, তাহলে অন্য কিছু করতে হবে। এখানে যিনি ছিলেন যে রকম কৃষকের জন্য বরাদ্দ, বরেন্দ্রভূমির পানির জন্য বরাদ্দ, এই সব মানুষের জন্য খরচ না করে আমাকে খেয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া আমি যদি কাজ বন্ধ করে দিই, তাহলে তো এটাই করতে হবে।;
কয়েক দিন আগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার মাহিকে শীতের পাখি উল্লেখ করে চলচ্চিত্র জগতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডাবলু বলেছিলেন রাজনীতি অত সস্তা ব্যাপার নয়। এ নিয়ে গোদাগাড়ীতে আরও অনেক নেতা বক্তব্য দিচ্ছেন।
মাহি শীতের পাখির ব্যাপারে বলেছেন, ‘শীতের পাখি কেন বলেছে, সেটা তো তারা জানে। যদি শীতের পাখি বলে থাকে, শীতের পাখি বলা তাঁদের জন্য খুবই অপমানজনক। কেউ একজন ১৫ বছর ধরে থেকেও মাঠ গরম করতে পারল না, জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পারল না। তাঁদের কথামতে আর একজন শীতের পাখি আসার পর তিন মাসে যদি জনগণ তাঁর পক্ষে চলে যায়, তাহলে বলতে হবে ১৫ বছরে তাঁর কোনো অর্জন নেই আসলে।’
তিনি বলেন, ‘শীতের পাখি আমি নই। এখানে আমি বরারই অনেক কিছু করেছি। এখানে আমি মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক করেছি। আমি গতকালকে (বুধবার) গ্রামের কৃষকদের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁরা বলেছেন, আপা, আপনার দেওয়া লাউয়ের বীজের লাউ একটু আগে খেয়ে আসলাম।’
মাহিকে হুমকি দেওয়ার সাহস কারও নেই উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাকে হুমকি দেওয়ার সাহস নেই। প্রশাসন ও মিডিয়া আমার পাশে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একদম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে। কিন্তু যেটা হচ্ছে, আমি যেখানে বক্তব্য দিতে যাই, সেখানে হঠাৎ করে উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি ট্রাক মার্কার স্লোগান দিলে সেখানে অন্য একজন অন্য প্রতীকে স্লোগান দিয়ে ফেলছে। জনগণের মধ্য থেকে বাজে মন্তব্য করে ফেলছে। কিন্তু তারা আসলে জনগণ না। তারা কোনো এক দলের, কোনো এক প্রার্থীর পক্ষে এটা করছে। আদিবাসীরা এই যে আমাকে এত ভালোবাসা দিচ্ছে, পা ধুইয়ে দিচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে তাদের তো মাথা গরম আছে। তাদের (প্রতিপক্ষ) নির্দেশনা আছে ও যেখানে যাবে সেখানে যেন হেনস্তা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের লোক সারাক্ষণ আশপাশে আছে, তারা বিষয়টি দেখছে। আমার হিউজ পোস্টার রাতে লাগাই, দিনে দেখি নাই। প্রচুর পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে, আমার লোকজনকে হেনস্তা করছে। কিন্তু প্রশাসনকে বললেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাচ্ছে।’
মাহি কি মাঠে থাকবেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি এখনো আছি। আমার গলা ভেঙে ফেলেছি। মাঠেঘাটে ঘুরছি। আপনাদের কি মনে হয় আমি এটা করছি শেষ পর্যন্ত মাঠে না থাকার জন্য। রাজনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের সেবা করা। আমি তো গোপনে গোপনে সেবা করতাম। যখন আমি দেখলাম এরা মনে করে ফেলেছে যে রাজনীতিকে জিম্মি করে এটা শুধু তারাই করবে, তখন আমার মনে হয়েছে যে না, এখন মাঠে নামার পালা। এখন আমার জনগণের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সেবা করার পালা। তখন আমি নেমেছি।’
রাজশাহীর এই আসনে মোট প্রার্থী ১১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীই চারজন। এই নির্বাচনে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি (ট্রাক), বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার (বেলুন), স্বতন্ত্র মো. গোলাম রাব্বানী (কাঁচি) ও স্বতন্ত্র মো. আখতারুজ্জামান (ঈগল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম), জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের আল সামাদ (টেলিভিশন) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙ্গর)।