সমঝোতার ভিত্তিতে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখানে জাপার প্রার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ। তাঁরা জাপার লাঙ্গল ঠেকাতে বিএনপির সাবেক নেত্রীর ট্রাকের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
বগুড়া-২ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জেলা জাপার সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। অন্যদিকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বগুড়া জেলা বিএনপি সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় বিউটি বেগমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিউটি বেগমকে সমর্থন দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিউটি বেগমের ট্রাক প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আহসান হাবীব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিহার ইউপির চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম, দেউলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপির চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। নৌকা হারিয়ে তাঁরা ট্রাকের জন্য ভোট চাইছেন।
বগুড়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রথমে মনোনয়ন দেয় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিককে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু আসন ভাগাভাগির মারপ্যাঁচে শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তৌহিদুর। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। লাঙ্গল ঠেকাতে এককাট্টা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিউটি বেগমের প্রচারণায় ঝুঁকে পড়েন তাঁরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগমের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের কলেজ রোডে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে বিউটির পক্ষে ভোট করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শরিফুল ইসলাম জাতীয় পার্টির প্রার্থী; মহাজোটের প্রার্থী নন। জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো জোট হয়নি। আসন সমন্বয় হয়েছে। আর দলীয় প্রার্থী না থাকায় নেতা-কর্মীরা নিজ উদ্যোগে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট করছেন। দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আকরাম হোসেন। তিনি কাঁচি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আল ফারাবী মো. নূরুল ইসলাম (বেঞ্চ)। দলীয় প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) বরকত উল্লাহ (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. বজলুর রহমান (সোনালী আঁশ) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী মো. মুনছুর রহমান শেখ (ডাব)।
দেউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দেউলী ইউপির চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ আসন ছেড়ে দিলেও লাঙ্গলের পক্ষ ভোট করার দলীয় কোনো নির্দেশ নেই। এ কারণে তাঁরা ট্রাকের পক্ষে ভোট চাইছেন।
বিউটি বেগম নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মী ট্রাক প্রতীককে সমর্থন দিয়েছেন।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মোকামতলা ইউপির চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো জোট হয়নি। বিউটি বেগমের সঙ্গে আছে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখানে আমাকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউ কেউ লাঙ্গলের বিপক্ষে কাজ করছেন।’